এটা আমার প্রথম বাংলায় ব্লগ লেখার চেষ্টা, তাই বানান বা ব্যাকরণ এ কিছু ত্রুটি দেখতে পেলে মার্জনা করে দেবেন সবাই। অনেক কাল থেকে নিজের ঘোড়ার গল্প গুলো বাংলায় লিখতে ইচ্ছে করে কিন্তু বাংলায় লেখাটা ইংরেজি তে লেখার চেয়ে বেশি খটোমটো এই ইংরিজি কিবোর্ডে। তাই আর করবো করছি করেও লেখা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু শেষ মেশ একটা চেষ্টা করেই ফেললাম। এতো কিছু লেখার আছে যে প্রথম কিস্তি টা শুধু মাত্র কিছু দরকারি ইনফরমেশন শেয়ার করলাম। পরের কিস্তি গুলোতে ঘোরার ডিটেলস গুলো বলবো।
----------------------
কাশ্মীর আমার জন্যে এমন একটি জায়গা যেখানে যাওয়ার জন্য আলাদা করে কোনো ইনস্পিরেশন লাগে না। যখনি মনটা পাহাড় পাহাড় করে ওঠে তখন মনে হয়ে কাশ্মীর চলে যাই - এমনি টান এই জায়গাটার। কাশ্মীর প্রথমবার যাই ২০২২ এর মে মাসে। আমার এক বান্ধবির কাশ্মীর ভ্রমণের দারুন সুন্দর সব ফটো দেখে ঠিক করে ফেলি আমিও যাবো। সেই প্রথম, তারপর ২ বার আরো গেছি আমরা কাশ্মীর পর পর দুবছর । আমার পার্মানেন্ট ভ্রমণের সঙ্গী হচ্ছে আমার মা। মা আর আমার ভালো লাগা খারাপ লাগা গুলো যেহেতু মিলে যায় তাই আমাদের ঘোরা গুলো হয়ে ওঠে আরো এঞ্জয়েবলে। সাধারণত আমি নিজেই নিজের টুর প্ল্যান করে থাকি যেহেতু ফিক্সড হোটেল বা প্যাকেজ এ ফ্লেক্সিবিলিটি কম হয়ে। কিন্তু তখনো কাশ্মীর যাওয়াটা এমন কমন ব্যাপার হয়ে যায়নি। লোকেদের মনে তখনো অনেক সংশয় ছিল কাশ্মীর কতটা সেফ সে নিয়ে। তার উপরে তখন সদ্য কাশ্মীর ফাইলস মুভি টা রিলিজ করেছে। চারিদিকে শোনা যাচ্ছে উপত্যকা এ নাকি খুব টেনশন চলছে। মিডিয়া রোজ খবর দিচ্ছে কোথায় কি হামলা হয়েছে মুভির জন্যে। (কিন্তু কাশ্মীর গিয়ে ওখানকার লোকজনের সাথে কথা বলে বুঝতে পারি এ শুধু মিডিয়া আর রাজনৈতিক গোষ্ঠী দের তৈরী আতঙ্ক। কাশ্মীরের মানুষেরা এক্কেবারে অন্য মাটির তৈরী। ওরা টুরিস্ট দের কখনোই কোনো ক্ষতি হতে দায়ে না, নিজের ঘরের মানুষের মতে করে আগলে রাখে ) | তাই আমি ট্রাভেল এজেন্ট এর সাথেই যাওয়া ঠিক করলাম। যেমন ভাবা তেমনি কাজ, পত্রপাঠ একটা ট্রাভেল এজেন্ট বেছে নিলাম গুগল রিভিউ রেটিং কে বেস করে। আমি একটা জিনিস বরাবর ফলো করি, ট্রাভেল এজেন্ট নিতে হলে লোকাল ট্রাভেল এজেন্ট কেই আমি বেশি প্রেফার করি তার কারণ টুর এর সময়ে কোনো প্রব্লেম হলে, সেই জায়গায় উপস্থিত এজেন্টরা বেশি তাড়াতাড়ি প্রব্লেম সল্ভ করতে পারে বা তাদের অফিস এ গিয়ে ডাইরেক্টলি কথা বলা যেতে পারে।
ট্রাভেল এজেন্সির শাবির ভাই একদিন বাদে রিপ্লায় দেন আমার হোয়াটস্যাপ মেসেজ এর। বলেন তিনি গেস্ট দের নিয়ে ট্রেকে গেছিলেন তাই দেরি হয়েছে উত্তর দিতে। আমি এক এক করে ওনাকে জানাই আমি কোথায় কোথায় যেতে চাই, কজন মানুষ ট্রাভেল করবো, কতদিন থাকবো ইত্যাদি। এখানে বলে রাখি, মা আর আমি দুজনেই পশুপ্রেমী, তাই ঘুরতে গিয়ে ঘোড়ার পিঠে চাপাটা এভোইড করে থাকি। এদিকে কাশ্মীরের সমস্ত পপুলার জায়গায় দেখি সব জায়গাতেই ঘোড়া নিয়ে যেতে হবে। ভারী মুশকিল ব্যাপার - তাহলে কি কাশ্মীরের প্ল্যান ক্যানসেল করতে হবে শুধু এই ঘোড়ার জন্যে? ইয়েঃ হাম হোনে নাহি দেঙ্গে ! তাই আদা জল খেয়ে নেমে পড়লাম আরো কিছু আর এন্ড ডি করতে। আবার গুগল ভরসা - কিন্তু কাশ্মীর যেহেতু তখনো অনেকটাই অদেখা ছিল তাই বিশেষ অল্টারনেট কিছু পাচ্ছিলাম না। তারপর হঠাৎ করেই একটা গ্রুপ এ খোঁজ পাই গুৱেজ বলে একটা সীমান্ত বর্তী জায়গার। তার সাথে বাঙ্গুস আর লোলাব ভ্যালিরও কথাও জানতে পারি। সেই সময়ে মাত্র দুটো টুর অপারেটর এই সেক্টর টায়ে ট্রিপ করাতো - তার মধ্যে আমি যে এজেন্সী বেছেছিলাম তারাও ওই সেক্টর টা ঘোরাতো। এই সমস্ত জায়গায় এতো রিমোট যে ওখানে শুধুমাত্র গাড়ি যায় - নো ঘোড়ার বিজনেস। ব্যাস আর আমাকে পায়ে কে ! শাবির ভাই কে বলি আমি অফবীট কাশ্মীর করতে চাই। প্রথমবার কাশ্মীর ভ্রমণ, তায়ে আবার দুই মহিলা , তও আবার তারমধ্যে একজন সিনিয়র সিটিজেন - তারা কিনা অফবীট সীমান্তবর্তী কাশ্মীরে যেতে চাইছে - শাবির ভাইও যেন একটু চিন্তায় পড়েন। কিন্তু তার চিন্তাকে আমি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দি - বলি যে আমরা মনস্থির করে ফেলেছি ওখানেই যাবো। শাবির ভাই আর না করতে পারেন না। কন্ফার্ম করে নি ঘোড়ায় না চাপার ব্যাপারটাও ।
এবার শুরু হয়ে বাকি সব কিছুর খবর নেয়া। গুৱেজ দিয়ে ট্রিপ শুরু হবে আর শ্রীনগর থেকে গুৱেজ যেতে গুগল ম্যাপ যদিও বলে ৬ ঘন্টা আসলে সেটা ৭-৮ ঘন্টা হয়ে যে রাস্তার অবস্থা বুঝে। মাঝে আবার হাই অল্টিটুডে পাস ক্রস করতে হয়ে - রাজদান পাস। শাবির ভাই বলেন কোনো চিন্তা করতে হবে না - উনি ৪x৪ গাড়ি দেবেন যে গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ভালো আর বসতে কমফোর্টেবল। আর কিছুটা রাস্তা ছাড়া নাকি বাকি পুরো রাস্তায় ভালো তাই চিন্তা করতে হবে না। আমি বিশেষ করে ড্রাইভারের কথা উল্লেখ করেছিলাম শাবির ভাই কে। ড্রাইভার ভালো না হলে ট্রিপ অনেক সময়েই ঘেঁটে যায়। শাবির ভাই আমাকে আশ্বস্ত করেন, ড্রাইভার নাকি ঘরের লোকের মতো হবে। তখন এটাকে শুধু কথার কথা ভেবেছিলাম কিন্তু যখন আমাদের ড্রাইভার খুরশিদ ভাই এর সাথে আলাপ হয়ে বুঝতে পারি সে ঘরের মানুষের চেয়েও বেশি খেয়াল রাখছে আমাদের। সত্যি বলতে কি, খুরশিদ ভাই এর ব্যবহারের জন্যেই যেন বারে বারে কাশ্মীর যেতে ইচ্ছে করে। উনি এবং অন্যের ফ্যামিলি আজ পর্যন্ত আমাদের কল করে খবরাখবর জিজ্ঞেস করেন, তাদের বাড়ি আসার জন্যে বার বার আমন্ত্রণ জানান (আমরা প্রতিবারই ওনাদের বাড়িতে প্রথমদিন গিয়ে লাঞ্চ করেছি পুরো যৌথ পরিবারের সাথে বসে )। উনি পুরো আমার ফ্যামিলি মেম্বারের মতো হয়ে গেছেন সত্যি বলতে।
এবারে দ্বীতিয় ব্যাপার হলো স্টে অপসন - যেহেতু প্রতন্ত গ্রাম এলাকায় থাকতে হবে তাই গুৱেজ ছাড়া বাকি দুটো জায়গা - বাঙ্গুস আর লোলাব ভ্যালি - আমাদের গভর্নমেন্ট গেস্ট/টুরিস্ট হাউস ছাড়া গতি নেই। গুৱেজ এ আমাদের জন্যে শাবির ভাই একটু নতুন তৈরী হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করেন। যখন আর উপায়ে নেই তখন আমি সবকটা থাকার জায়গায় ওকে করে দি, শুধু মাত্র একটা জিনিস খেয়াল রাখতে বলি সেটা হচ্ছে যেন ওয়েস্টার্ন টয়লেট পাওয়া যায়। শাবির ভাই সেটার গ্যারান্টী নেন।
তৃতীয় ব্যাপার হচ্ছে টেম্পারেচার - আমরা মে এন্ড থেকে শুরু করে জুন এর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ট্রাভেল করবো। এই সময়টা বৃষ্টি থেমে যায় , প্রকৃতি নিজের সাদা চাদর খুলে ফেলে হয়ে যায় পান্না সবুজ সুন্দরী। বৃষ্টি হয়ে না সাধারণত - কিন্তু রিমোট গ্রাম গুলোতে তখন রাতের বেলা ভালো ঠান্ডা হয়ে। আমি পরের এক মাস ধরে খুব ভালো করে নজর রাখি accuweather আপ এ। দেখি যে যত সময়ে কাছে আসছে তত রাতের টেম্পারেচার শূন্যের দিকে চলে যাচ্ছে গুরেজে। ঠিক করি যে ভালো রকম গরম জামা কাপড় নিয়ে যেতে হবে, সাথে মা আছে তাই কোন চান্স নেয়া যাবে না। সেটা যে কত ভালো ডিসিশন ছিল তা গুৱেজ পৌঁছে পরে বুঝতে পারি।
চতুর্থত সেই সময়ে কাশ্মীর এবং কাশ্মীরের গ্রামাঞ্চল জায়গাগুলিতে পাওয়ার এর খুব বেশি সমস্যা ছিল ( এখন অবশ্য অনেক বদলে গেছে। ইলেক্ট্রিসিটির আলাদা লাইন বসেছে, সোলার পাওয়ার প্যানেল বেড়েছে )। প্রতন্ত এই গ্রাম গুলিতে পাওয়ার শুধু বিকেলেই আসতো তাই পাওয়ার ব্যাঙ্ক এবং ফাস্ট চার্জার সাথে নিয়ে নিয়েছিলাম। DSLR ক্যামেরার জন্য ব্যাকআপ ব্যাটারিও সাথে ছিল।
সিম কার্ড নিয়ে আমার বিশেষ চিন্তা ছিল না কারণ আমার দুটো সিম কার্ড ই পোস্ট পেইড ( ভি আর জিও - প্রি অন পোস্ট) কাশ্মীর এ পরে পেইড কার্ড চলে না কিন্তু সমস্ত পোস্টপেইড কার্ড ভালো ভাবেই চলে। পোস্টপেইড না থাকলে লোকাল সিম নেয়া যায় আঁধার কার্ড দেখিয়ে একদম এয়ারপোর্ট এর বাইরে থেকেই ।
আর একটা জিনিস যেটা আমরা করে থাকি যেখানেই যাই না কোনো সেটা হচ্ছে একটা ডাবল বেড শিট আর বালিশের কভার সাথে রাখা। হোটেল বা গেস্ট হাউস এ বালিশ বিছানা পরিষ্কার কি না সেই নিয়ে তাহলে আর চিন্তা থাকে না।
তো সব খোঁজ খবর নিয়ে আমরা একদম রেডি হয়ে যাই আমাদের কাশ্মীর ট্রিপ এর জন্যে। আমাদের ফাইনাল রুট টা এরম ছিল -
- শ্রীনগর - ১ রাত
- গুৱেজ - ২ রাত
- রেশওয়ারী (বাঙ্গুস ভ্যালি) - ১ রাত
- চন্ডিগাম ( লোলাব ভ্যালি ) - ২ রাত
- শ্রীনগর - ১ রাত
প্যাকেজ ছিল এয়ারপোর্ট টু এয়ারপোর্ট - মানে এয়ারপোর্ট এর বাইরে থেকে ড্রাইভার আমাদের পিক আপ করবে আর শেষ দিন ড্রপ করবে। প্লেনের টিকেট আমি তখন এক মাস আগেই কেটেছিলাম পুনে টু শ্রীনগর এন্ড ব্যাক। যেহুতু তখন কাশ্মীরের এমন ক্রেজ হয়নি তাই ফ্লাইট টিকিট কম দামেই পাওয়া গেছিলো। এবারে এখানেও একটা ব্যাপার আছে। যারা কানেকটিং ফ্লাইট নেবেন যে কোনো জায়গার থেকে, আমার মতে যাওয়ার দিনের ফ্লাইট টা একই কেরিয়ার থেকে নেয়া ভালো। যেমন আমি এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট নিয়েছিলাম পুনে টু দিল্লী আর দিল্লী টু শ্রীনগর দুটো সেক্টরের জন্যই। এতে লাভও হয়ে যে ধরুন আপনার প্রথম ফ্লাইট টা দেরিতে ছাড়লো তাহলে কানেকটিং ফ্লাইট মিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যদি একই কেরিয়ার হয়ে তাহলে তারা আপনার জন্যে অপেক্ষা করবে। আমাদের সাথে এই ঘটনা টা ঘটেছিলো যে ফগ এর জন্যে সকালের ফ্লাইট লেট এ ছাড়ে। যাদের পরের ফ্লাইট টা ইন্ডিগো বা স্পাইস জেট এর ছিল তাদের প্রচুর টেনশন হয়েছিল এবং ঝক্কি ঝামেলা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের বেলায় এয়ার ইন্ডিয়ার গ্রাউন্ড স্টাফ রাই দৌড়া দৌড়ি করে সব করিয়ে দিয়েছিলো আর আমরা পুনে এয়ারপোর্ট থেকেই খবর পেয়েগেছিলাম যে পরের ফ্লাইট আমাদের জন্যে অপেক্ষা করবে তাই চিন্তা নেই।
ঠিক দিনে আমরা এক্কেবারে ভোরের আলো ফোটার মুখে এয়ারপোর্ট পৌঁছে যাই সাথে থাকে একরাশ উত্তেজনা পরের ৭ দিনের জন্যে। সেই গল্প নিয়ে আসবো এর পরের কিস্তি তে।
--------------------------
এবার বলি কি কি নিয়ে যাবেন সাথে :
জামাকাপড় - কাশ্মীর খুব কংসেরভেটিভে নয় টুরিস্ট দের ব্যাপারে, যদিও লোকাল মেয়েরা হিজাব পরেন কিন্তু টুরিস্ট মহিলারা যেকোনো কিছু পরতে পারেন। যদিও স্থান কাল পাত্র বিশেষে পোশাক হওয়া বাঞ্চনীয়। যেমন দর্শনীয় স্থানে যা কিছু পড়ুন না কোনো কিন্তু ওখানকার ধর্মীয় স্থান গুলোতে ( যেমন দরগা, মন্দির) মেয়েদের মাথা ঢেকে যাওয়ার প্রচলন আছে। তাই সাথে একটা শাল বা ওড়না থাকা বাঞ্চনীয়। ওয়েদার দেখে গরম জামাকাপড় নিয়ে যাবেন। রাতের দিকে বৃষ্টি পড়লে খুব ভালো ঠান্ডা হয়ে যায় । আর একটা কথা, আপনি দেশের অন্য জায়গায় হয়তো ইভ টিসিং ফেস করে থাকতে পারেন, কাশ্মীরে কিন্তু আমি আজ পর্যন্ত কোনো জায়গায় কখনো এই জিনিস দেখিনি। আপনি কি জামা পরে আছেন, আপনি যুবতী না বয়স্ক, আপনি একা না দোকা - এসব কিছুই ম্যাটার করে না। ওখানের পুরুষ নারী নির্বিশেষে আপনাকে অতিথি রূপে দেখবে এবং দরকারে ওদরকারে এগিয়েও আসবে নিজের থেকেই।
বর্ষার/ স্নোর জামা - যদি রেইন কোট নাও নিয়ে যান তাহলেও একটা ছাতা সঙ্গে রাখা ভালো। অনেক সমেয়েই ওয়েদার চেঞ্জ হয়ে যায় আর বৃষ্টি পড়তে পারে। আচ্ছা বরফের সময়ে যদি যান তাহলে আমি বলবো একটা ভালো ওয়াটের প্রুফ জ্যাকেট সাথে রাখুন, তাতে হাওয়া, বৃষ্টি আর স্নো তিনটেতেই কাজে দেবে। আমরা আমাজন ব্র্যান্ড এর জ্যাকেট নিয়ে গেছিলাম তাতে ০ ডিগ্রী পর্যন্ত কোনো অসুবিধে হয়নি।
ওষুধ - প্রেসক্রিপশন ওষুধ দিন গুনে সাথে করে নিয়ে যাবেন কারণ কাশ্মীরে একটা ব্যাপার আছে ( অনেক লোকাল এর থেকে শুনেছি এবং নিজেরো অভিজ্ঞতা হয়েছে) ওষুধপাতি খুব দুনম্বরি পাওয়া যায়। সেই সব খেয়ে লাভের থেকে ক্ষতি বেশি হবে। তাই মোটামুটি প্রেসক্রিপশন ওষুধ, পেটের রোগ, মাথাব্যথা / জ্বর/ কাশি, মোশন সিকনেস, ব্যান্ড এইড , এন্টি এলার্জি - এই সমস্ত বেসিক ওষুধ সাথে রাখুন।
সানস্ক্রিন - এইটা খুব আবশ্যক। কাশ্মীরে আপনি অনেক্ষন বাইরে কাটাবেন। যদি গাড়িতেও থাকেন তাহলেও সূর্যের রশ্মি থেকে বাঁচতে পারবেন না। এবং ওখানে সূর্য অনেকটাই হার্শ - যেটা হাই অল্টিটুডে এ হয়ে থাকে। তাই রোজ মনে করে একটা ভালো ব্র্যান্ড এর সানস্ক্রিন মেখে বাইরে যাবেন।
জুতো - ফ্যান্সি চটি জুতোর সাথে সাথে মহিলারা স্পোর্টস শূ বা ভালো ওয়াকিং শূ সাথে নিন। শিকারা বা বিকেলে এদিক ওদিক ঘোরার জন্যে ফ্যান্সি জুতো আর যখন সকালে অনেক হাঁটাহাঁটি বা ট্রেক করবেন তখন স্পোর্টস শূ। সাথে এক জোড়া বাড়ির চপ্পল রাখুন। বিশেষ করে এইসব রিমোট জায়গায় গেলে তখন তো আর হোটেল থেকে কোনো রুম শূ দেবে না তাই ঘরের চপ্পল থাকলে অনেক সুবিধে হয়ে বিশেষ করে রাতে যখন ঠান্ডা পড়ে।
ওয়াকিং স্টিক - এটা কিন্তু খুব জরুরি। সাথে সিনিয়র সিটিজেন থাকলে তো বলবো ম্যান্ডেটরি। আর না থাকলেও বলবো একটা হাইকিং / ওয়াকিং স্টিক নিয়ে যান যদি কোনো প্রতন্ত জায়গায় যাচ্ছেন। অনেক সুন্দর সুন্দর ওয়াকিং ট্রেইল পাবেন, সাইটসিইং এর জন্যে অনেক জায়গায় বেশ খানিকটা হাঁটতেও হবে তাই সাথে এই হাইকিং স্টিক থাকলে পায়ের উপরে চাপ কম পড়ে। উঁচু নিচু জায়গা গুলোতেও হাঁটতে বিশেষ সুবিধা হয়ে। ডিক্যাথলন এ ভালো কোলাপ্সিবলে ওয়াকিং স্টিক পাওয়া যায়, নানান দামের মধ্যে, একটু করছি সাপেক্ষ হলেও এটা একটা ভালো ইনভেস্টমেন্ট ভবিষৎতের যেকোনো ট্রিপ এর জন্যে। আর ধরুন যদি আপনি একান্তই না কিনতে চান ওয়াকিং স্টিক তাহলে আপনার ড্রাইভার কে বলে একটা শক্ত পোক্ত গাছের ডাল নিয়ে নেবেন, লাঠি হিসাবে ওতেও কাজ চলে যাবে।
ইলেকট্রনিক্স - ফাস্ট চার্জার , পাওয়ার ব্যাঙ্ক , ক্যামেরার অতিরিক্ত ব্যাটারী , মেমরি কার্ড, পোর্টেবল হার্ড ডিস্ক, কানেক্টর , এইসব নিজের দোকারমতো সাথে রাখুন। রিমোট গ্রাম গুলিতে যে হোটেল পাওয়া যায় সেখানে কিন্তু চার্জিং পয়েন্ট খুব কম থাকে। তাই সেইমতো ব্যাকআপ নিয়ে যান। আর একটা ব্যাপার, যদি কেউ কোনো ইলেকট্রিকাল হেলথ ডিভাইস ব্যবহার করেন তাহলে কিন্তু অবস্যই হোটেল এ জিজ্ঞেস করে নেবেন ব্যাকআপ আছে কিনা ইলেক্ট্রিসিটির। আমি এক বয়স্ক কাপেল কে বিপদে পড়তে দেখেছিলাম এই নিয়ে বাঙ্গুস এর হোটেল এ।
ডকুমেন্ট - আধার কার্ড সাথে রাখুন। প্রান্তিক এইসব গ্রাম গুলিতে বার বার চেকপোস্ট আসবে যেখানে এন্ট্রি করতে হয়ে আধার কার্ড নম্বর দিয়ে। হোটেল বুকিং এর স্ক্রিন শট বা প্রিন্টআউট সাথে রাখুন। হোটেল এর কন্টাক্ট নম্বর ও সাথে রাখুন। এজেন্ট এর সাথে গেলে যদিও দরকার পড়ে না, কিন্তু তবু সাথে রাখা ভালো। আমাদের রেশওয়ারী ( বাঙ্গুস ভ্যালি) তে যে টুরিস্ট হাট ছিল ড্রাইভার তার রাস্তা ভুল করে আর আমাদের কাছে কেয়ার টেকার এর নম্বর ছিল না তাই একটু হুজ্জতি হয়েছিল ডাইরেকশন নিয়ে। ফ্লাইট বা ট্রেন টিকেট এর প্রিন্ট আউট রাখুন যদি ইন্টারনেট কোনো কারণে না চলে। টুর এজেন্ট এর নম্বর আর ইমার্জেন্সি র জন্যে বাড়ির লোকের নম্বর সাথে রাখুন।
শুকনো খাবার - সাথে কিছু স্নাক্স জাতীয় শুকনো খাবার রাখা ভালো। বিশেষ করে বিসকুট বা টি কেক - সকালের চায়ের সাথে কাজে আসবে। যদি ব্রেকফাস্ট প্যাকেজ এ ইনক্লুডেড না থাকে তাহলে কিছু ইনস্ট্যান্ট খাবার সাথে রাখতে পারেন - নুডল কাপ্স, ইনস্ট্যান্ট উপমা ইত্যাদি। সাথে একটা ফল কাটার ছোট ছুরি রাখতে পারেন, কাশ্মীরে অনেক ভালো ফল পাওয়া যে যা রাস্তায় খেতে খেতে গেলে দারুন লাগে - সেজন্যে ছুরি কাজে লাগে। একটু বিটনুন সাথে নিন, ফলের সাথে ভালো লাগে। আচ্ছা সাথে কিছু এক্সট্রা বিসকুট, টফি বা চিপস রাখুন - বিশেষ করে যদি কোনো প্রতন্ত গ্রামে যান। এই সব গ্রামে যখন ঢুকবেন তখন অনেক ছোট ছোট বাচ্চাদের দেখতে পাবেন। ওদেরকে এই সব বিসকুট বা টফি দিলে ওরা যে নির্মল হাসি ফেরত দেবে তাতেই আপনার মন ভালো হয়ে যাবে।
বাকিসব - বিছানার চাদর, বালিশের কভার, স্যানিটারি জিনিসপত্র, স্যানিটাইজার, ট্রাভেল তোয়ালে, ফোল্ড করা যে এমন ব্যাগ (কেনাকাটার পরে লাগবে), সানগ্লাস ।
যতটা সম্ভব গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করলাম যাতে কোনো দরকারি ইনফরমেশন মিস না হয়ে যায়। যদি কোনো জিজ্ঞাস্য থাকে তাহলে কমেন্টস এ জানাবেন। পরের কিস্তি গুলোতে আরো ঘোরার ফটো থাকবে।
Trip Date : May-June 2022
Trip Start : Pune
Please Note/ Disclaimer : আমি এখানে একটা কথা অ্যাড করতে চাই - আপনি যদি কারো কাছ থেকে ফ্যামিলির মতো বিহেভিয়ার এক্সপেক্ট করেন তাহলে সেইমতো তাদেরকেও সম্মান দেবেন। কাশ্মীরি লোকেরা কিন্তু এই সম্মান দেওয়াটাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। সে মালিক হোক বা কর্মচারী বা পথচলতি কোনো ব্যক্তি। আপনি সম্মান দিলে ওনারাও সম্মান দেবেন। তাই যখন আমি বলছি যে খুরশীদ ভাই আমাদের এক্কেবারে বাড়ির মতো করে ট্রীট করেছেন তার মানে আমরাও ওনাকে সেই ভাবেই দেখেছি , সম্মান দিয়েছি , সব কিছুতে ইনক্লুড করেছি। উনিও বলার অপেক্ষা রাখেননি এবং নিজে থেকেই নানান জায়গায় এগিয়ে এসে হেল্প করেছেন ( মা কে ধরে নিয়ে টিলার উপরে উঠতে হেল্প করা, মা না যেতে চাইলেও একেবারে ঘরের ছেলের মতো বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে আসা , মা র লাঠির দরকার হলে নিজে গিয়ে ডাল খুঁজে আনা , রাতে যখন রেশওয়ারী তে শুধু আমরা দুই মহিলা বোর্ডার ছিলাম তখন সব সময়ে পাশে থাকা যাতে ভয় না লাগে ইত্যাদি )। কিন্তু আমি অনেক ড্রাইভারদের কাছে শুনেছি এবং দেখেওছি যে লোকেরা তাদের শুধু মাত্র কাজের লোকের মতোই ট্রীট করছে , তাই সেরকম ব্যবহারের পর তাদের এক্সপেক্ট করা উচিত নয় যে বাড়ির মতো ব্যবহার পাবে। আমার এটা বলা দরকারি মনে হলো কারণ ব্যক্তিবিশেষে এক্সপেরিয়েন্স আলাদা হয়ে যায় শুধু মাত্র লোকের ব্যবহারের জন্যে।
#Kashmir #offbeatkashmir
Other blogs in the Kashmir series:
- Is Kashmir safe for travelers?
- What to pack for Kashmir in May -June ( for Gurez- bangus - Lolab circuit)
- Kashmir Diaries - Day 1 : Pune to Srinagar | Nishat Bagh
- Kashmir Diaries -Day 2: Srinagar to Gurez| Razdan Pass | Krishnaganga
- Kashmir Dairies - Day 3 : Walking around Gurez Village
- My Top Favorite Foods From Kashmir - Part 1
- Bengali Blog - Offbeat Kashmir (May 2022) - পুনে থেকে শ্রীনগর
No comments:
Post a Comment